কক্সবাজারের পেকুয়ায় সামাজিক বনায়ন উজাড় করেছে অস্ত্রধারী সংঘবদ্ধ দূর্বৃত্তরা। আর এ নিয়ে মামলা আতংকে ভুগছেন নিরহ উপকারভোগী ও বনবাসীরা। ঘটনাটি ঘটেছে, উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা নামক এলাকায়। জানা যায়, সামাজিক বনায়ন প্রথা প্রচলনের পর থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া রেঞ্জের আওতাভুক্ত টইটং, বারবাকিয়া ও পহরচাঁদা বনবিটের খতিয়ানভুক্ত বিস্তির্ণ বনাঞ্চলে সরকারী অর্থায়নে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হয়। উক্ত বনায়ন প্রকল্প পরিচর্যা ও রক্ষনাবেক্ষনে নিয়োগ দেয়া হয় শত শত উপকারভোগী। উপকারভোগীদের রাতদিন খাটুনি নির্ঘূম পাহাড়ায় রোপিত সামাজিক বনায়নের গাছপালাগুলোও হয় পরিণত। ঠিক এসময় সামাজিক বনায়নগুলোতে আশ্রয় নিয়ে আস্তানা গড়ে তোলে এক শ্রেনীর অস্ত্রধারী অসাধু বনদূস্য চক্র। একপর্যায়ে ওই এলাকার বিস্তির্ণ সামাজিক বনায়নের গাছপালা সমৃদ্ধ হতে থাকলে তার উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সেখানে আশ্রিত অস্ত্রধারী বনদূস্যদের। এসময় সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়নে আশ্রয় নেয়া অস্ত্রধারী বনদূস্যরা সূযোগ বুঝে দলবল নিয়ে সশস্ত্র মহড়া ও গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটিয়ে এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে হাকাবকা হুমকি ধমকি দিয়ে নিরহ বনবাসী ও সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের জিম্মি অতিষ্ট করে রাতের বেলায় নির্বিচারে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়নের পরিণত অপরিণত গাছাপালা নির্বিচারে নিধন লোপাট পাঁচার বাণিজ্যে মাতেন। এ ঘটনায় নিরহ উপকারভোগীরা স্থানীয় বনবিভাগের লোকজনদের মৌখিক ও লিখিতভাবে অবহিত করে প্রতিকার কামনা করলেও মিলেনি তাদের কোন সায় সাড়া। ফলে, সাধারণ বনবাসী ও সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মাঝে দেখা দেয় বিষ্ময় ও হতাশা। টইটং ইউনিয়নের আলগিরাদ্দারা এলাকার ২০০৩ সালের ৪নং প্লটের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা জানিয়েছেন, তাদের নামে বরাদ্ধের সামাজিক বনায়ন নিধন চুরি, লোপাটের পর বনাঞ্চলে আশ্রিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এবার বনায়নের জায়গায় ঘন অবৈধ বসতি বসিয়ে বেহাত করছে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জায়গা জমি। গত বছর অনুষ্টিত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী এলাকার জাফর আহমদের পুত্র মোঃ আলমগীর প্রকাশ ডাকাইত আলমগীর, ধনিয়াকাটা এলাকার মৃত তৈয়ম গোলালের পুত্র মনজুর আলম ও মঞ্জুর আলমের পুত্র রিদুয়ানের নেতৃত্বে একটি বেপরোয়া বনদূস্য সিন্ডিকেট গড়ে উঠে। পরে, ডাকাইত আলমগীর বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়ার রাজাখালী সহ প্রতিবেশী চকরিয়া উপজেলার পলাতক দাগী সন্ত্রাসীদের দলে ভিড়িয়ে টইটংয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্টে গড়ে তোলে একাধিক আস্তানা ও অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রের মওজুদ। আর তাদের নিয়ে পাহাড়ী এলাকায় সশস্ত্র মহড়ায় দাপিয়ে বেড়ানোর মাধ্যমে জনমনে ছড়ায় ভীতি ও জিম্মিদশা। স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, ডাকাত আলমগীরের বাড়ি বারবাকিয়া ইউনিয়নে হলেও সে এখন তার এলাকা ছাড়িয়ে পাশর্^বর্তী টইটং পাহাড়ী এলাকার লোকজনদের জিম্মি ও অতিষ্ট করে তুলছে। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বনাঞ্চলে কায়েম করেছে ত্রাসের রাজত্ব। শুধু বন নিধন, পাহাড়ি এলাকায় চাঁদাবাজি, বনবিভাগের জায়গা জমি জবরদখল বেচা বিক্রি বেহাত নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি, বালি ও বনজ সম্পদ পাচার বাণিজ্য ছাড়াও এমন কোন অপরাধ কর্মকান্ড নেই যা ডাকাত আলমগীর বাহিনী সংঘঠিত করছেনা। ইতিমধ্যে তার দূর্গম পাহাড়ি এলাকার বসতবাড়ি সংগ্লন্ন থেকে কিশোরীর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জনশ্রুতি পাওয়া গেছে যে, অভিযুক্ত দূধর্ষ ডাকাইত আলমগীরের অত্যাচার নির্যাতনের হাত থেকে খোদ তার জন্মদাতা পিতাও রক্ষা পায়নি। এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ স্থানীয় থানায় দায়ের করা হলেও রহস্যজনক নিরব ভুমিকা পালন করে থানা পুলিশ। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা জানিয়েছেন, সামাজিক বনায়ন উজাড়ের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও আইনের আমলে নেয়ার পরিবর্তে নিরহ উপকারভোগী ও বনবাসীদের উপর দায় চাপিয়ে তাদের মামলায় জড়ানোর বনবিভাগের প্রস্তুতির গুঞ্জনে এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম আতংক ও উদ্বেগ। এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আলমগীরের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। নিরহ বনবাসী ও সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মামলায় জড়ানোর গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে বারবাকিয়া বিট কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম ভুঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করলে টইটংয়ের বনাঞ্চলে অস্ত্রধারী দূর্বৃত্তদের উৎপাতের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এদের বিরুদ্ধে বন বিভাগের শুধু মামলা দেয়ার ক্ষমতা ছাড়া আর কিছু নাই। কারণ বনবিভাগের পর্যাপ্ত অস্ত্র ও জনবল সংকট রয়েছে। আর সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী ও নিরহ বনবাসীদের মামলায় জড়ানোর গুঞ্জনের বিষয়টি সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন।
পাঠকের মতামত: